নিউজ সোনারগাঁ টুয়েন্টিফোর ডটকম: সোনারগাঁ উপজেলায় পুলিশের নির্যাতনে ৫৫ বছর বয়সি নুরুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর ঘটনায় ময়না তদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছে। এদিকে নুরুল ইসলামের লাশ ময়না তদন্ত ছাড়া দাফন করার জন্য সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বরাবর আবেদন করেছেন নিহত নুরুল ইসলাম মেয়ের জামাতা। সেই আবেদন পত্রে পরিবারের সকল সদস্য স্বাক্ষর করেন।
সোমবার বিকালে উপজেলার জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের বুরুমদী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গ্রামে নিহত নুরুল ইসলামের একটি পোল্ট্রি ব্যবসা ছিল বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানান।
নিহতের মেয়ে মিথিলা আক্তার জানান, গতকাল বিকালে সোনারগাঁ থানাধীন তালতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী উপপরিদর্শক ইলিয়াস আহমেদ এক কনস্টেবলকে নিয়ে তাদের বাড়িতে আসেন৷ দুজনেই সাদা পোশাকে ছিলেন৷ তারা এক লাখ টাকা দাবি করেন, না দিলে ওই এএসআই তাকে চলমান রাজনৈতিক মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়৷
“আমরা ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়েছিলাম, কিন্তু প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এএসআই ইলিয়াস আমার বাবাকে হাতকড়া পরিয়ে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আমার বাবা বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি হয়। এরপর তারা আমার বাবাকে কিলঘুষি ও লাঠি দিয়ে মারধর করে। একপর্যায়ে বাবা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে পুলিশ সদস্যরা সেখান থেকে চলে যায়।”
আহত নুরুল ইসলামকে পরিবারের সদস্যরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পাঁচ কন্যার জনক এই বৃদ্ধের তিন বছর আগে ওপেন-হার্ট সার্জারি হয়েছিল। তিনি একজন অসুস্থ ব্যক্তি হওয়ায় পুলিশ নির্যাতন সহ্য করতে পারেননি, বলেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা।
মিথিলা বলেন, ‘আমার বাবা ইনহেলার ও পানি চেয়েছিলেন, কিন্তু পুলিশ তা নিতে দেয়নি। আমার বাবা যদি ইনহেলার নিতে পারতেন তাহলে তিনি মারা যেতেন না। পুলিশ আমার বাবাকে হত্যা করেছে, এর বিচারের জন্য প্রয়োজনে আদালতে যাব।
স্থানীয়রা জানান, নুরুল ইসলামের মৃত্যুর খবর শুনে আবারও পুলিশ তার বাড়িতে আসে। এরপর বিক্ষুব্ধ স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাদের অবরোধ করে।
পরে বন্দর ও সোনারগাঁ সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসেন ও সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম পুলিশ ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লোকজনকে শান্ত করেন।
তালতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক সাইফুল ইসলামের দাবি, মাদক সংক্রান্ত গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়।
‘পুলিশ মাদক উদ্ধারের জন্য তার বাড়িতে গিয়েছিল। কিছুই না পেয়ে তারা স্থান ত্যাগ করেন। হৃদরোগী হওয়ায় পুলিশের ভয়ে তার মৃত্যু হতে পারে।’
‘সাদা পোশাকে’ অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘কখনও কখনও প্রয়োজনে সাদা পোশাকে পুলিশ অভিযান চালায়।’
ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মাদক সংক্রান্ত কোনো মামলা আছে কিনা এবং এর আগে কখনো তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি এ পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘আমি এ স্টেশনে নতুন বিস্তারিত জেনে বলতে পারবো।
এদিকে, ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করা হয়েছে বলে জানান নিহত নুরুল ইসলামের পরিবার।